সূচিপত্র / অধ্যায় 7: নানাবিষয়ক আলোচনা
এই অংশে আগের অধ্যায়ের “ন্যূনতম চেতনা-চক্র”—সংবেদন করা, অল্পক্ষণ ধরে রাখা, বেছে নেওয়া এবং আত্মপক্ষসমর্থন—কে ধাপে ধাপে বড় করে, কোষঝিল্লির রসায়ন থেকে শুরু করে সবচেয়ে সরল নিউরন ও আদিম স্নায়ুনেটওয়ার্ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
I. “অনুভব ও বাছাই করা যায় এমন ঝিল্লি” থেকে “উত্তেজনাশীল ঝিল্লি-পৃষ্ঠ”
- শুরু: একক কোষ আলো, রসায়ন ও বলবিদ্যার পার্থক্য ঝিল্লির টান ও গেটিংয়ে লিখে ফেলে এবং ক্ষণস্থায়ী স্মৃতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়।
- আপগ্রেড: যখন ভোল্টেজ-গেটেড আয়ন চ্যানেল সঠিক সমাহারে থাকে, স্থানীয় ক্ষুদে উদ্দীপনা ধারাবাহিকভাবে চ্যানেল খুলে–বন্ধ করায় এবং ঝিল্লি বরাবর ছুটে চলা গেটিং-তরঙ্গ তৈরি হয় (অর্থাৎ ঝিল্লিতে দৌড়ানো “টান–ফ্লাক্স” তরঙ্গ)।
- তাৎপর্য: এটিই উত্তেজনাশীলতা। এটি নিকটবর্তী অনুভবকে দীর্ঘতর দূরত্বে যাওয়ার বার্তায় রূপান্তর করে। অনেক একক কোষ ও স্নায়ুহীন বহুকোষী (যেমন স্পঞ্জ) সমগ্র এপিথেলিয়াম জুড়ে এমন “ঝিল্লি-বার্তা” চালাতে পারে।
শক্তি-তন্তু তত্ত্ব (EFT)-এর নকশা নোট: উত্তেজনা-তরঙ্গ হল ঝিল্লি বরাবর “টান-ভাঁজের রিলে”। টান যত চটপটে (দ্রুত রিবাউন্ড, উপযুক্ত চ্যানেল-রেসিপি), তরঙ্গ তত দ্রুত ও স্থির।
II. “সমগ্র ঝিল্লির সম্মিলিত সাড়া” থেকে “কোষ-থেকে-কোষ রিলে”
সমস্যা: দেহ বহুকোষী হলে সংকেত কীভাবে কোষসীমা পেরোবে?
দুটি প্রাকৃতিক পথ:
- সরাসরি স্রোতপথ: পাশের কোষে গ্যাপ জংশন তৈরি হয় (দুই ছোট পুকুরকে নালা দিয়ে জোড়ার মতো)। ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল তরঙ্গ সরাসরি পেরিয়ে গিয়ে একটি পরিবাহী এপিথেলিয়াম গড়ে তোলে।
- রসায়নিক রিলে: উজানের কোষ নির্দিষ্ট স্থানে অণু ছাড়ে; ভাটির রিসেপ্টর তা ফের গেটিং-পরিবর্তনে বদলে দেয়। এটি আদিম রাসায়নিক সিন্যাপ্স: এলোমেলোভাবে “ওষুধ ছোড়া” নয়, বরং নিম্ন-প্রান্তিক এলাকার দিকে বার্তা ডেলিভারি।
প্রাকৃতিক উদাহরণ:
- স্পঞ্জে নিউরন নেই, তবু দেহজুড়ে ক্যালসিয়াম/বিদ্যুৎ-তরঙ্গ চালিয়ে সমন্বিত সংকোচন ঘটায়।
- অ্যামিবা/স্লাইম মোল্ড রাসায়নিক তরঙ্গ দিয়ে দলগত গমন ও সিদ্ধান্ত সিঙ্ক করে।
শক্তি-তন্তু তত্ত্বের নোট: এসব “জংশন” হল নিকট-সমালোচনামূলক ছোট দ্বীপ—যেখানে প্রান্তিক কম, বার্তা সহজে পার হয়।
III. প্রথম “স্নায়ু”: কোষের ধ্রুবীকরণ ও দিক-নির্দেশিত জংশন
যখন একধরনের কোষ গ্রহণ-পাশ ও প্রেরণ-পাশ স্থায়ীভাবে ভাগ করে—গ্রাহ্য শাখা (ডেনড্রাইট) এবং প্রেরণ-তাঁত (অ্যাক্সন)—তখন বার্তা-পাঠ ঝিল্লি-পৃষ্ঠ থেকে সরলরেখা-রুটে বদলে যায়।
মূল গঠনরূপ পরিবর্তন:
- জ্যামিতিক ধ্রুবীকরণ: চ্যানেল, সাইটোস্কেলেটন ও ভেসিকল স্পষ্ট বিভাজনে “রিসিভ–কম্পিউট–সেন্ড” অভ্যন্তরীণ দিক গড়ে।
- অ্যাক্সনসদৃশ চ্যানেল-ব্যান্ড: উত্তেজনা-তরঙ্গকে বিশেষ করিডরে “প্যাক” করা হয় (রেখা বরাবর টান আরও আঁটসাঁট), নির্ভরযোগ্যতা ও পাল্লা বাড়ে।
- বিশেষায়িত জংশন: প্রান্তে রাসায়নিক বা বৈদ্যুতিক সিন্যাপ্স গঠিত হয়—বারবার ব্যবহৃত হতে পারে এমন “নিম্ন-প্রান্তিক লাফ-প্ল্যাটফর্ম”।
প্রকৃতির উদাহরণ:
- ক্টিনোফোর, নিডারিয়া (জেলিফিশ, সী-এনিমোন), হাইড্রা—বিচ্ছিন্ন নিউরন ও বিস্তৃত স্নায়ু-জাল দেখায়; শিকার, পলায়ন, দেহ-সংকোচন চালাতে সক্ষম।
- কিছু গোষ্ঠী হয়তো স্বাধীনভাবে নিউরন বিকশিত করেছে—ইঙ্গিত দেয় “ধ্রুবীকরণ + জংশন” হলো শারীরিকভাবে সহজ রাস্তা।
শক্তি-তন্তু তত্ত্বের নোট: অ্যাক্সন হল “উচ্চ-টানের সরু রাস্তা”; সিন্যাপ্স হল নিয়ন্ত্রিত নিকট-সমালোচনামূলক অঞ্চল, যেখানে “ধরে রাখা” রূপান্তরিত হয় “শিখনযোগ্য প্রান্তিকে”।
IV. “বিচ্ছুরিত জাল” থেকে “সরল সার্কিট”
জাল মানে সংযোগস্থল, লুপ ও রুট—যা পরিবর্ধন, দমন, সময়-নিয়ন্ত্রণ ও রাউটিংকে সম্ভব করে।
প্রথম সার্কিটগুলো:
- পেসমেকার-রিং: জেলিফিশের প্রান্তের ছন্দ-কেন্দ্র তাল দিয়ে ডিসচার্জ করে; মাংসপেশি-শীট তাল মিলিয়ে সংকুচিত হয়ে সাঁতার তোলে।
- রিফ্লেক্স আর্ক: হাইড্রায় একটি ট্রিগার ইনপুট → ক্ষুদ্র রিলে → এফেক্টরে গিয়ে প্রায় এক ঝটকায় সাড়া দেয়।
- শেখার অঙ্কুরোদ্গম: ইনপুট ও আউটপুট বারবার সহ-ছন্দে হলে সিন্যাপটিক প্রান্তিক নেমে যায় (চ্যানেল ঘনত্ব বাড়ে, রিসেপ্টর সহজে খোলে); পরের বার সিগন্যাল সহজে পাস করে। এটি “ধরা → বাছা”র গঠনায়ন, অর্থাৎ প্রাথমিক প্লাস্টিসিটি।
শক্তি-তন্তু তত্ত্বের নোট: পুনরাবৃত্ত সুর-মিল “সুতো যোগ” করে জংশনে এবং প্রান্তিক নামায়; দীর্ঘকাল নিষ্ক্রিয় থাকলে “সুতো খোলে”, প্রান্তিক বাড়ে। স্মৃতি হয়ে ওঠে দৃশ্যমান প্রান্তিক-ভূদৃশ্য।
V. কেন স্নায়ুতন্ত্র “দীর্ঘ লাইন”, “খোলস”, ও “স্তরায়ন” বেছে নেয়
দেহ বড় হলে ও আচরণ জটিল হলে:
- দীর্ঘ লাইন (দীর্ঘ অ্যাক্সন): দূরের অনুভবকে সিদ্ধান্ত-বিন্দুর কাছাকাছি টেনে আনে, পথে এলোমেলো ক্ষয় কমায়।
- খোলস (মাইলিন): অ্যাক্সনের চারপাশে কার্যকর টান বাড়ানো একখানা জ্যাকেটের মতো, রিলে দ্রুত ও কম-রস্রাবী হয়।
- স্তরায়ন (কেন্দ্রীয়/পেরিফেরাল): বহু জংশনকে গ্যাংলিয়ন/আদিম মস্তিষ্কে জড়ো করে “ভোট” যোগ–বিয়োগ ও রুট ভাগ করে, তার-খরচ বাঁচায়।
শক্তি-তন্তু তত্ত্বের নোট: সবই টান-ভূদৃশ্য ও পথ-জ্যামিতি ঠিকঠাক করা—রাস্তা সোজা, ঢাল মসৃণ, “স্টেশন”-এ প্রান্তিক যথাস্থানে: যেখানে কম হওয়া উচিত সেখানে কম, যেখানে বেশি হওয়া উচিত সেখানে বেশি।
VI. বাস্তব “দৃশ্য”: প্রকৃতিতে চোখে দেখা ধাপগুলো
- স্পঞ্জ: নিউরন নেই; তবু দেহজুড়ে উত্তেজনা-তরঙ্গ ও সমন্বিত সংকোচন দেখায়—“পৃষ্ঠ-প্রেরণ + রিলে” দেহ-স্তরের আচরণের জন্য যথেষ্ট।
- প্লাকোজোয়া (Trichoplax): আদর্শ নিউরন নেই; কিন্তু পেপটাইড-নিঃসরণকারী কোষ দলগত আচরণ সংগঠিত করে—আদিম রাসায়নিক সিন্যাপ্সের মত।
- নিডারিয়া (হাইড্রা, জেলিফিশ): বিস্তৃত জাল ও ছন্দ-কেন্দ্র সরল সার্কিট ও প্লাস্টিসিটির লক্ষণ (যেমন অভ্যাসিত হওয়া) সমর্থন করে।
- ক্তিনোফোর: স্বতন্ত্র সংকেত-অণু-সমাহারসহ স্নায়ু-জাল—“ধ্রুবীকরণ + জংশন” পথ স্বাধীনভাবে উদ্ভবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- স্লাইম মোল্ড/শৈবাল প্রভৃতি স্নায়ুহীন জীব: সমন্বিত আচরণ প্রমাণ করে “ন্যূনতম চক্র” কোষ ও গোষ্ঠী স্তরেও চলে; নিবেদিত স্নায়ু-জাল কেবল দক্ষতা বহু গুণ বাড়ায়।
VII. শক্তি-তন্তু তত্ত্ব ও প্রচলিত ভাষার এক-বাক্যের সামঞ্জস্যতা
- প্রচলিত বর্ণনায় নিউরন অ্যাকশন পটেনশিয়াল ও সিন্যাপ্সের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।
- শক্তি-তন্তু তত্ত্বে, “টান–ফ্লাক্স” তরঙ্গ-প্যাকেট উচ্চ-টানের লাইনে ছুটে নিম্ন-প্রান্তিক জংশনে পৌঁছে, যেখানে “ধরে রাখা” “শেখনযোগ্য বাছাই”-এ রূপ নেয়।
দুই বর্ণনাই একই ঘটনাকে ধরে; শক্তি-তন্তু তত্ত্ব কেবল “উপাদান ও ভূদৃশ্য” স্পষ্ট করে: কোন রাস্তা মসৃণ, কোন জংশন ঢিলা, আর পুনরাবৃত্তি কীভাবে স্থানীয় প্রান্তিক কমায়।
VIII. সংক্ষেপে: ন্যূনতম চক্র থেকে স্নায়ু-জালে পাঁচটি ধাপ
- উত্তেজনাশীল ঝিল্লি অতিসন্ন অনুভবকে চলমান বার্তায় রূপ দেয়।
- কোষ-থেকে-কোষ রিলে একক কণ্ঠকে কোরাসে বদলে দেয়।
- ধ্রুবীকরণ ও স্থির জংশন “পৃষ্ঠ-প্রেরণ”কে “রেখীয় এক্সপ্রেসওয়ে”-তে সংকুচিত করে।
- বিচ্ছুরিত জাল → আদিম সার্টিকিট “ধরা → বাছা”র জন্য প্লাস্টিক প্রান্তিক-ভূদৃশ্য খোদাই করে।
- দীর্ঘ লাইন, খোলস, স্তরায়িত গ্যাংলিয়ন একসঙ্গে গতি, স্থিতি ও পরিসর বাড়ায়।
এখান থেকে চেতনা আর কেবল “অনুভব–বাছাই”র ন্যূনতম চক্র নয়; এটি এমন এক নেটওয়ার্ক, যা বহু উৎস মিলায়, অতীত মনে রাখে, এবং পরের ছন্দ অনুমান করে। সূচনা সরল—একটি পুনর্লিখনযোগ্য ঝিল্লি; চূড়ান্ত ফলও সরল—সময়ের ছেনি কাটা এক প্রান্তিক-মানচিত্র।
স্বত্বাধিকার ও লাইসেন্স (CC BY 4.0)
স্বত্বাধিকার: অন্যথা উল্লেখ না থাকলে, “Energy Filament Theory” (পাঠ্য, সারণি, চিত্র, প্রতীক ও সূত্র)‑এর স্বত্বাধিকার লেখক “Guanglin Tu”‑এর।
লাইসেন্স: এই কাজটি Creative Commons Attribution 4.0 International (CC BY 4.0) লাইসেন্সের অধীনে বিতরণ করা হয়। যথাযথ স্বীকৃতির শর্তে বাণিজ্যিক বা অ‑বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কপি, পুনঃবিতরণ, অংশবিশেষ ব্যবহার, রূপান্তর ও পুনঃপ্রকাশ করা যাবে।
প্রস্তাবিত স্বীকৃতি বিন্যাস: লেখক: “Guanglin Tu”; কর্ম: “Energy Filament Theory”; উৎস: energyfilament.org; লাইসেন্স: CC BY 4.0.
প্রথম প্রকাশ: 2025-11-11|বর্তমান সংস্করণ:v5.1
লাইসেন্স লিংক:https://creativecommons.org/licenses/by/4.0/